কিছু দিন আগেও সে মানুষ ছিল।
- সে কে?
- পরে সে কী হয়েছিল?
- কীভাবে তার এই পরিণতি হয়েছিল?
- এই পরিচয় থেকে বের হওয়ার জন্য সে কী কী করেছিল?
- তার শেষ পরিনতি কি হয়েছিল ‘নীল মানুষের কাহিনি’ অবলম্বনে লেখো।
উত্তর :
১) সে কে?
উদ্ধৃত অংশটি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা নীল মানুষের কাহিনী গল্প থেকে নেয়া হয়েছে। এই গল্পের প্রধান চরিত্রের নাম রণজয়। এখানে সে বলতে এই রণজয়কেই বোঝানো হয়েছে।
২) পরে সে কী হয়েছিল?
পরে গ্রামের মানুষের কাছে বিভিন্ন নামে পরিচিতি পায়। পাপু প্রথমে তাকে চোর এবং পরে দৈত্য বলে চিহ্নিত করে। গ্রামের অন্যান্য মানুষেরা কেউ তাকে গরিলা, কেউ শিম্পাঞ্জি আবার কেউ ওরাং-ওটাং বলে চিহ্নিত করে। প্রকৃতপক্ষে মানসিকভাবে সে রণজয় থাকলেও পরিবর্তিত দৈহিক চেহারার কারণে সে মানুষের পরিচয় হারিয়ে ফেলে।
৩) কীভাবে তার এই পরিণতি হয়েছিল?
এই রণজয় ভাগ্যের বিড়ম্বনায় একদিন ভিনগ্রহের বাসিন্দাদের সংস্পর্শে আসে এবং তার ফলে তার দৈহিক চেহারা ও শারীরিক বল বা শক্তি প্রায় আমুল বদলে যায়। চেহারা দৈত্যের আকার ধারণ করে। গায়ের শক্তি এতটাই বেড়ে যায় যে, পৃথিবীর কোন মানুষ আর তাকে ধরে রাখতে পারেনা। উচ্চতা প্রায় সাড়ে সাত ফুট এবং মুখখানা ‘প্রকাণ্ড’ আকার ধারণ করে। মাথায় বড় বড় চুল গজায় এবং গায়ের রং গাড়ো নীল বর্ণের হয়ে যায়। গ্রামের মানুষেরা, এমনকি তার বাবাও, তাকে আর রণজয় বলে চিনতে পারে না।
৪) এই পরিচয় থেকে বের হওয়ার জন্য সে কী কী করেছিল?
রাণজয় তার এই দৈত্যের পরিচয় থেকে বের হওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে। কারণ, তার দৈহিক চেহারা পাল্টে গেলেও তার মধ্য থেকে মানবিক মূল্যবোধ ও চিন্তাভাবনা মুছে যায়নি।
প্রথমত, চিত্রার সঙ্গে দেখা করে সে তার নিজের পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু চিত্রা তাকে চিনতে তো পারেইনি উল্টে এমনভাবে ভয় পেয়ে যায় যে পরিস্থিতি সামাল দিতে তাকে সেখান থেকে পালিয়ে জঙ্গলে লুকিয়ে পড়তে বাধ্য হয়।
দ্বিতীয়তঃ, সে নিজের পরিচয় দিয়ে বাড়িতে ফিরে গিয়েছিল। কিন্তু সে চেষ্টাও বৃথা হয়। তার এই চেহারা দেখে নিজের বাবাই ভয়ের চোটে অজ্ঞান হয়ে যায়।
তৃতীয়ত, খাবারের সন্ধানে একজনের বাড়িতে ঢুকে খিচুড়ি রান্না করে খায় এবং সেই সময় ঘরে ঢোকা চোরদের বেঁধে রেখে আসে। সঙ্গে একটি চিঠি লিখে সে বাড়ির মালিককে জানায় যে, সে আসলে দৈত্য নয়।
৫) তার শেষ পরিনতি কি হয়েছিল ‘নীল মানুষের কাহিনি’ অবলম্বনে লেখো।
খিচুড়ি খেয়ে চোরদুটোকে বেঁধে রেখে সেখানে সে যে চিঠি লিখে আসে, তাতে রণজয় নিজেকে ‘নীল মানুষ’ হিসেবে পরিচয় দেয়। ঘটনা পরম্পরায় সম্ভবত সে ভুলে যায় তার নিজের নাম বা পরিচয়। তাই নীল মানুষের পরিচয়ের মধ্যেই সে ক্রমশঃ হারিয়ে যায় বলে ধারণা করা যায়। একাধিকবার চেষ্টা করেও যখন সে ব্যর্থ হয় নিজের পরিচয় দিয়ে মানুষের সমাজে, মানুষের মত বাঁচতে, তখন এই হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই প্রকট হয়ে ওঠে। তাই গল্পের শেষে সে ক্ষীণ আশা নিয়ে আবারও জঙ্গলে ফিরে যেতে বাধ্য হয়।
Comments
Post a Comment